পেনশন প্রিপারেশন

পেনশন প্রিপারেশন
আকিব শিকদার

আমার যে সহকর্মীরা ফাঁকা পেলে সরকারী মাল চেটে খেতো, কৌশলে

অসৎ উপার্জনের পথ করে নিতো, তাদের সন্তানেরা

ভেটকি মাছের মতো বোকা ভেবলা। তাদের সংসারে অতৃপ্তির আগুন।

কোনদিন দু’পয়সা ঘুষ নেইনি। কেন নেবো! আমি তো কারও

অপকর্মের সহায়তাকারী হতে চাই না। উনত্রিশ বছর ছিলাম

রোডস এন্ড হাইওয়ে ইঞ্জিনিয়ার।

আমার গোপন দানে কত পথশ্রমিকের সংসার চলেছে, ওদের সন্তানেরা

মানুষ হয়েছে। প্রতিদানে বিধাতাও আমায় কম দেননি।

বড় মেয়েটা ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফিতে পি.এইচ.ডি করে এখন

কানাডায় সেটেল। ছেলেটা ফ্যাশন ডিজাইনার হয়ে ইতালীতে। তারও আছে

ফুটফুটে দুটা সন্তান।

কাউকে ঠকাইনি আমি, কারও পথে কাঁটা হয়ে দাড়াইনি।

আমার অধিনে কাজ করা শ্রমিকেরা যখন

রাস্তা মাপার তিন পা ওয়ালা ক্যামেরামার্কা যন্ত্রটা টেনে ঘেমে যেতো,

নিজের রুমালে তাদের শরীর মুছেছি। বিনিময়ে পেয়েছি

শ্রদ্ধামাখা ভালোবাসা।

কোনদিন কর্মচারীদের ধমকাইনি, তারা ভুল করলেও না।

ক্ষমতার দাপটে রাগ দেখানো তো

ইতর লোকের কাজ, ক্ষমা করতে জানে মহামানবেরা।

টাকা-পয়সা অনেক জমিয়েছি জীবনে। ঠিক করেছি পেনশনের টাকায়

এক সেট ভালো কোট-পেন্ট বানাবো টপটেন থেকে, এলিফেন্ট রোড ছেঁকে

কিনবো এক্সক্লুসিভ জুতা এক জোড়া।

দামি ব্রিফকেসে কিছু টাকা ভরে, ডাইরিতে পরিচিতজনদের

নাম ঠিকানা লিখে নামবো ভ্রমনে। আমাদের যত আত্মিয় আছে

বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়ানো, তাদের বাসায় বেড়াতে গিয়ে

এক রাত থাকবো। প্যাকেটে ঝুলিয়ে নেবো

কিছু ভালো মিস্টি আর ছোটখাট উপহার।

জীবনটা উপভোগ করতে চাই। আত্মিয়দের সাথে হাসিমাখা সেলফি তুলে

ফেইসবুকে আপলোড দিতে চাই। ইউটিউবে রাখতে চাই

সমবেত আড্ডার কিছু ভিডিও। সুর্যটা ডোবার আগে যেমন

মেঘগুলোকে সোনালী আভায় সাজায়, আমি চাই

জীবনের শেষ দিনগুলো তেমনি রঙ্গীন রঙে রাঙাতে।

আরও পড়ুন: ছড়ানো ছিটানো সংসার

আকিব শিকদার

Netrakona Protidin

নেত্রকোনা প্রতিদিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال