ছড়ানো ছিটানো সংসার

ছড়ানো ছিটানো সংসার
আকিব শিকদার

বাইরে বৃষ্টি। জানালায় মুখ রেখে

তাকিয়ে ছিলাম।

ট্রেন থামলো স্টেশনে। যাত্রিদের ঘিচঘিচ,

ব্যাগ বস্তার টানাটানি, কুলি আর হকারের চিৎকার।

এরই ফাকে দেখি প্লাটফর্মে

তিনজন ভিক্ষুক; স্বামী-স্ত্রী-সন্তান।

লোকটার একটা পা

হাটু অব্দি কাটা, দাড়িয়েছে স্ক্রেচে ভর করে।

হাতে ভিক্ষার থালা। পাশে তার বউ, সন্তান কুলে

ধরে আছে থালাটিতে।

কুলের শিশুটা হাত উচিয়ে

বাবা মায়ের উপর ছাতা মেলে রেখেছে।

ট্রুংট্রাং শব্দে থালাতে কিছু পয়সা

ছুড়ে মারলাম। অমনি কী আনন্দ শিশুটার।

দম্পত্তির মুখেও তৃপ্তির হাসি। একটা ছাতার নিচে

একটা সংসার, কতো পরিপাটি।

সংসার আছে আমারও, ছড়ানো ছিটানো সংসার

সকাল আটটায় নাকে মুখে দু’মুঠো খেয়ে

কর্মস্থলে ছুটি। সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে বাধি গলার টাই।

মিম, মানে আমার বউ, তার

নয়টা পাচটা অফিস।

ড্রেসিংটেবিলে ব্যাস্ত হাতে চুল আচড়ানোর বেলায়

গলাবাজি করে- ঘরদোর সামলিয়ে

কোনদিন ঠিক টাইমে অফিসে যেতে পারলো না।

রাতে বিছানায় উলটো পাশ ফিরে শুয়। গায়ে হাত বুলিয়ে

অভিমান ভাঙাই যখন, খেকিয়ে ওঠে।

আমাদের একমাত্র মেয়ে, সুহা যার ডাকনাম, একলা ঘরে

টিভি দেখে দেখে চোখে জ্বালা ধরে গেলে

জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে আকাশ দেখে।

মেঘদের দিকে তাকিয়ে নিজের তুলার পুতুলটার সাথে

কথা কয়, কুলে নিয়ে বসে থাকে।

ট্রেনের হুইসালে সম্বিত ফিরলো। টিকেটের সাথে

নাম্বার মিলিয়ে দুজন যাত্রি বসেছে সামনের সিটটায়।

বৃদ্ধ মা আর পুত্র। ছেলেটার হাতে

এক্সরে প্লেট, প্রেসক্রিপশন, ঔষধপত্রের পুটলি।

বৃদ্ধার ডান হাতে কনুই অব্দি ব্যান্ডেজ,

গলাতে ঝুলানো। সম্ভবত ডাক্তারখানা থেকে ফিরছে।

মনেপরলো আমার মায়ের হার্ডএ্যাটাকের দিনগুলোতে

হাসপাতালেই যেতে পারিনি।

“আম্মার অসুখ, গ্রামে যাবো”- বউয়ের অভিমত

নিতে গেলে জানালো- “তোমার অন্য ভাইয়েরা

কেন আছে! বাবা কী করেন! তোমার না অফিসে

কাজের চাপ?” আরও কতো জ্ঞান দান।

হায় রে স্বজনবিমুখতা! হায় রে শহরবাস!

ট্রেন ছুটছে তিব্র, বাতাসে উড়ছে চুল।

আমি জানি... ওঠোনে পা রাখতেই

মা আমাকে দূর থেকে দেখে শুয়া ছেড়ে

তরিঘরি বসবে।

প্যারালাইজড পা দুটি নিয়েই বিছানা ফেলে

উড়ে আসার ব্যর্থ চেস্টা করবে।

কেমন আছি জিজ্ঞাসার পরপরই বলবে-

বউমাকে দেখছি না কেন? নাতনিটাকে নিয়ে এলে কি হতো?”

কাধের ভারি ব্যগটা মেঝেতে রেখে

দীর্ঘশ্বাস ছাড়বো যখন, তজবী জপা থামিয়ে বাবা বলবেন-

“আর কতো শহরে থাকবি! তোদের ছাড়া বাড়ি ঘর

কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে রে...”

আরও পড়ুন: পেনশন প্রিপারেশন

আকিব শিকদার

Netrakona Protidin

নেত্রকোনা প্রতিদিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال